আমেরিকান ন্যাশনাল মেন্টাল হেলথ ইন্সটিটিউশন- এর একটা গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে একজন ব্যক্তির যার কিনা মানসিক অসুস্থতা রয়েছে,তার কমপক্ষে ১০ বছর সময় লেগে যায় শুধুমাত্র মেন্টাল হেলথ এইড চাওয়ার জন্য।সেই পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে মেন্টাল হেলথ সাপোর্ট-এর জন্য আওয়াজ তোলাটা এক প্রকার ট্যাবু হিসেবেই ধরা হয়। অনেকেই গিল্ট অথবা ইনসিকিউরড ফিল করেন তার মেন্টাল হেলথ কন্ডিশন কারো কাছে কনফেস করতে। আবার অনেকেই সেইফ মানুষ অথবা ভরসাযোগ্য মানুষের অভাবে বলতে পারেন না।অথবা বললেও অপর পক্ষের মানুষ টা হয়তো খুব অপ্রাসঙ্গিক অপ্রয়োজনীয় কম্প্যারিজন সিনারিও তুলে আনেন যা তাকে মানসিক ভাবে আরো ভেংগে দেয়। তাই এক্ষেত্রে প্রত্যেক কে জানা দরকার মানসিক অবসাদে ভুক্তভোগী একজন মানুষের সাথে কিভাবে কথা বলা উচিত। এমন কি খুব ভরসা যোগ্য, সেইফ মানুষের কাছে খারাপ লাগার কথা বললেও সুইসাইডাল চিন্তা কে কমানো সম্ভব।ওপেন কনভারসেশন ,সেমিনার এর মাধ্যমে মানসিক সাহায্য কে সহজলভ্য – স্বাভাবিক করা সম্ভব।
মেন্টাল হেলথ নিয়ে আমরা সবাই খুব একটা সচেতন না হওয়ার কারনে ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন এবং ফিলিং স্যাড/ সিচুয়েশনাল ডিপ্রেশন টার্ম দুইটিকে গুলিয়ে ফেলি।ক্লিনিকাল ডিপ্রেশন এর লক্ষন গুলো মূলত ৩-৪ সপ্তাহ দীর্ঘ হয়। এর মধ্যে খাওয়ায় অরুচি, অমনোযোগিতা, পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব অথবা অতিরিক্ত ঘুমানো,ঘুম থেকে উঠার পর ক্লান্তি, পছন্দের কাজের প্রতি অবহেলা ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। আ্যলকোহল,ড্রাগ ডিপেন্ডেন্সি এর মত ভয়াবহ ব্যাপার গুলো ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন এর সাথে কানেক্টেড থাকতে পারে।
অন্যদিকে সিচুয়েশনাল ডিপ্রেশন/ফিলিং স্যাড একটা শর্ট টার্ম মেন্টাল স্টেট যা পরিস্থিতি/মুড ভালো হওয়ার পরপরই চলে যায়।নিয়মিত ব্যায়াম,ব্যালেন্সড ডায়েট,নিয়মিত ঘুমের সাইকেল,আপনজনের সাথে নিয়মত কথা বলা,যেকোন প্যাশন/ শখ এর কাজ করলে সিচুয়েশনাল ডিপ্রেশন কে মোকাবেলা করা সম্ভব।কিন্তু ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন এর ক্ষেত্রে প্রফেশনাল সাইকোলজিক্যাল হেল্প নেওয়া খুবই জরুরি।
ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশনের কয়েকটি কমন লক্ষন :
ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন এর কয়েকটি খুব কমন লক্ষন রয়েছে।সেগুলো হলঃ
- অনেকদিন ধরে বিষাদগ্রস্ত থাকা।এবং এই নিরবচ্ছিন্নভাবে মন খারাপ এর মূল কারন খুজে না পাওয়া।
- লাইফের যে কোন অনাকাংখিত দূর্ঘটনা এর জন্য মন খারাপ থাকা খুব ই স্বাভাবিক, কিন্তু এই মন খারাপের ব্যাপ্তিকাল যদি অনেকদিন/মাস/ বছর হয়ে থাকে, তাহলে ব্যাপারটা উদ্বেগজনক।এবং খুব দ্রুত মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
- প্রতিদিনের কাজ,ডেডলাইনের প্রতি এক প্রকার তিক্ততা অনুভব হওয়া।এমনকি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার মত আনন্দের কাজ করতেও ইচ্ছা না হওয়া।
- আচরনে/ব্যবহারে লক্ষ্যজনক ভাবে পরিবর্তন আসা।
- সবসময় মানসিক ভাবে অবসাদগ্রস্ত / ক্লান্ত থাকা।
- ২০১৭ সালে হেলথ লাইনে প্রকাশিত একটা আর্টিকেল থেকে জানা যায় যে ডিপ্রেশন এর অন্যতম একটা লক্ষন হল,যে কোন কাজে মোটিভেনের অভাব।
- স্লিপ সাইকেল-এর মারাত্মক পরিবর্তন আসা। অতিরিক্ত ঘুম/ একেবারেই ঘুম না হওয়া।
- কারণ ছাড়াই শরীর ব্যথা করা।অথবা মাথা ব্যাথা,পেটে ব্যাথা হওয়া।
প্রাত্যহিক জীবনে স্যাডনেস কে হ্যান্ডল করতে পারলে, ক্লিনিক্যাল ডিপ্রেশন এর মত মেন্টাল হেলথ ইস্যু এর সাথে লড়াই করা সহজ হয়।
সিচুয়েশনাল ডিপ্রেশন কে ফেইস করার জন্য আমরা যা করতে পারি
- নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম করা।
- সুষম খাবার খাওয়া
- নিয়মিত এবং পরিপূর্ণ ঘুমের অভ্যাস গড়ে তোলা
- আপনজনের সাথে নিয়মত কথা বলা
- যেকোন প্যাশন, হবি এক্সপ্লোর করা
- জীবনের উদ্দেশ্য খুজে পাওয়ার চেষ্টা করা।