এংজাইটি অ্যাটাক হলে কী করবেন? সহজ টিপস এবং গাইডলাইন

এংজাইটি অ্যাটাক কি শুধু আমাদের জেনারেশনের সমস্যা?

না, আপনি জানলে অবাক হবেন যে, গুহাবাসী আদিম মানুষদেরও এংজাইটি অ্যাটাক হতো। তাদের এংজাইটি বা দুশ্চিন্তা কিন্তু আপনার বা আমার মতো ছিল না। আদিম যুগে গুহাবাসীরা শিকারি পশুর আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য এংজাইটি অনুভব করত। এর জন্য তাদের ব্রেইন এক প্রকার স্ট্রেস হরমোন রিলিজ করতো যেটা তাকে এলার্ট রাখতে সাহায্য করতো। 

আজ আমরা গুহা যুগ পেরিয়ে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সময় বাস করছি। এখন আর আপনাকে পশুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষার কথা ভাবতে হচ্ছে না ঠিকই, কিন্তু আপনার ব্রেইন ঠিক একইভাবে আপনাকে বাইরের যেকোনো বিপদ থেকে সতর্ক রাখার কাজ করে যাচ্ছে। এটা আপনাকে আজকের এই ব্যস্ত পৃথিবীতে সার্ভাইভ করতে সাহায্য করছে। 

কিন্তু সমস্যা তখনই হয়,যখন কোন কারণ ছাড়া অথবা খুব ছোটখাটো ইস্যুতে আপনার এংজাইটি অ্যাটাক হয়। যেমন, অফিসে কোনো ই-মেইল দেখা মাত্রই মনে হতে পারে এটি হয়ত কোনো নেতিবাচক সংবাদ বা ক্লাসে হঠাৎ নিজের নাম শুনে মনে হতে পারে ভুল কিছু করে ফেলেছেন। অথবা কোনো কাজ শেষ করার সময় এক মুহূর্তে মনে হতে পারে যে সবকিছু ঠিকমতো হয়নি। 

এগুলো ভাবতে ভাবতেই আপনার এংজাইটি অ্যাটাক হতে পারে।

এংজাইটি অ্যাটাকের সাধারণ লক্ষণগুলো কী?

– হঠাৎ স্নায়ুচাপ, অস্থিরতা বা উত্তেজনা অনুভব করা  

– কোনো বিপদ বা অনিশ্চিত ঘটনার আশঙ্কা করা বা ভয় পাওয়া

– হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়া  

– দ্রুত শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া (হাইপারভেন্টিলেশন)  

– অতিরিক্ত ঘাম হওয়া  

– কাঁপুনি অনুভব করা  

– দুর্বল বা ক্লান্ত অনুভব করা  

– মনোযোগ ধরে রাখা বা বর্তমানে অন্য কিছু ভাবা কঠিন হয়ে যাওয়া  

– ঘুমের সমস্যা হওয়া  

– পেটের সমস্যা বা হজমের সমস্যা অনুভব করা  

আপনি যদি এসব লক্ষণ নিজের মধ্যে প্রায়ই লক্ষ্য করেন, তাহলে কিছু সাধারণ টিপস আপনার কাজে আসতে পারে।

1. গভীর শ্বাস নিন: ধীরে ধীরে গভীর শ্বাস নিন এবং তা ধরে রাখুন, তারপর ধীরে ধীরে শ্বাস ছেড়ে দিন। এটি শরীরকে শান্ত করতে এবং মনোযোগ ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করে।

2. গ্রাউন্ডিং টেকনিক ব্যবহার করুন: “5-4-3-2-1” গ্রাউন্ডিং পদ্ধতি চেষ্টা করতে পারেন। আশেপাশে পাঁচটি জিনিস দেখুন, চারটি জিনিস স্পর্শ করুন, তিনটি জিনিস শুনুন, দুটি জিনিসের গন্ধ নিন, এবং একটি জিনিসের স্বাদ অনুভব করুন। এটি মনোযোগকে বিভ্রান্ত করতে সাহায্য করবে।

3. নিজের মধ্যে আত্মবিশ্বাস আনার চেষ্টা করুন: নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিন, “আমি নিরাপদ আছি,” “এটা অস্থায়ী,” বা “এই অনুভূতি চলে যাবে।” এমন ইতিবাচক বাক্য বারবার মনে মনে বললে মানসিক শক্তি বৃদ্ধি পায়।

4. শরীরের দিকে মনোযোগ দিন: শরীরের বিভিন্ন অংশ আলাদাভাবে শিথিল করতে চেষ্টা করুন, যেমন—কাঁধ, মুখ, বা হাত। ধীরে ধীরে শরীরের চাপ মুক্ত করুন। 

5. প্রিয় কাউকে ফোন করুন: কারো সাথে কথা বললে মন হালকা হতে পারে। উদ্বেগ দূর করতে কখনো কখনো শুধুমাত্র কাউকে নিজের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করাও খুব সহায়ক হতে পারে।

6. হালকা হাঁটা বা প্রসারিত করা: কিছুক্ষণ হাঁটা বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রসারিত করলে শরীরে এন্ডরফিন নিঃসৃত হয়, যা উদ্বেগ কমাতে সাহায্য করে।

7. হালকা বিনোদন গ্রহণ করুন: একটি পছন্দের গান শুনুন, কিছুক্ষণ আঁকুন, বা একটি গল্প পড়ুন। মনকে অন্যদিকে ব্যস্ত রাখার জন্য ছোট ছোট বিনোদনের মাধ্যমগুলো অনেক সময় কার্যকর হতে পারে।

8. ক্যাফেইন ও চিনি এড়িয়ে চলুন: এংজাইটি অ্যাটাকের সময় বেশি ক্যাফেইন বা চিনি খাওয়া থেকে বিরত থাকুন, কারণ এগুলো উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

এগুলো চেষ্টা করলে মন এবং শরীর কিছুটা হলেও শান্ত হয় এবং উদ্বেগের মুহূর্তগুলো সহজভাবে মোকাবিলা করা সম্ভব হয়।

যদি আপনার অল্প কারণেই বা কারণ ছাড়াই বারবার এনজাইটি ট্রিগার করে, তবে একজন এক্সপার্ট সাইকোলজিস্টের সাহায্য নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হতে পারে। সবসময় নিজে নিজে সমাধান করা সম্ভব নয়, এবং এক্সপার্টের সাহায্য নেওয়া কোনো দুর্বলতা নয়। এটি বরং সচেতনতার নিদর্শন এবং নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরিচয়।

রিল্যাক্সি: আপনার পাশে সবসময়

আমাদের এক্সপার্ট সাইকোলজিস্টরা এংজাইটি, স্ট্রেস এবং মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আপনাকে সাহায্য করতে প্রস্তুত। এখনই রিল্যাক্সি অ্যাপ ডাউনলোড করুন এবং সেশন বুক করুন।

👉 রিল্যাক্সি অ্যাপ ডাউনলোড করুন

👉কাউন্সেলিং সেশন বুক করুন  আপনার মানসিক স্বাস্থ্য আমাদের প্রথম অগ্রাধিকার। 💚

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *