পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন (Post partum Depression)

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন (Post partum Depression)

রীতা সন্তান জন্মের পর থেকেই খুব একটা ভালো অনুভব করছিল না। সে মনে করত, তার সন্তানের প্রতি তার ভালোবাসা নেই। অনেক সময় সে মনে করত, অন্য মায়েরা যেভাবে হাসি মুখে বাচ্চাকে নিয়ে খেলে, সে তেমন আনন্দ কেন করতে পারছে না! মাঝে মাঝে তার মাথায় এমন চিন্তাও আসে যে, সে যদি ভালো মা না হয়! একদিন তার স্বামী রীতাকে কাঁদতে দেখে। রীতা জানায়, সে মনে করে সে মায়ের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ।

নতুন মা হওয়ার যাত্রা একজন নারীর জীবনে এক অন্যরকম সুন্দর অভিজ্ঞতা। তবে এই আনন্দময় অভিজ্ঞতার সাথেই অনেক সময় এক অদ্ভুত মানসিক চ্যালেঞ্জ আসে, যাকে আমরা ‘পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন’ বলতে পারি। 

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কী?

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন (Postpartum Depression) হচ্ছে এক ধরনের মানসিক অবস্থা যা সাধারণত সন্তানের জন্মের পরবর্তী কয়েক সপ্তাহ বা মাসে মায়েদের মধ্যে দেখা যায়। এই সময়ে মায়েরা অবসাদ, নিরাশা, দুশ্চিন্তা এবং অস্থিরতার মত অনুভূতি অনুভব করে। অনেকেই এটা বুঝে উঠতে পারেন না কেন এইরকম হয়। রীতার মত আরও অনেক মায়েরা মনে করে থাকেন যে এটা তাদের ব্যর্থতার চিহ্ন, কিন্তু বাস্তবে এটি মানসিক রোগের একটি ধরণ, এবং এটি প্রায় প্রতি দশজন মায়ের মধ্যে একজনের মধ্যে ঘটে।

বিভিন্ন গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের হার গ্রাম এবং শহরভেদে ভিন্ন। সাধারণত, গ্রামাঞ্চলে এই হার কিছুটা বেশি, যা প্রায় ২২% থেকে ৩৫% পর্যন্ত বলে ধারণা করা হয়। আর শহরাঞ্চলে বসবাসরত কিছু মায়ের ক্ষেত্রে এই হার ১৮% থেকে ২৮% এর মধ্যে হতে পারে। বিশেষ করে ঢাকার বিভিন্ন বস্তিতে বসবাসকারী মায়েদের মধ্যে পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের উচ্চ প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে​​​​।

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের কারণগুলো:

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের নির্দিষ্ট কোন কারণ নেই, তবে কিছু কারণ রয়েছে যা এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তুলতে পারে:

  • হরমোনাল পরিবর্তন: গর্ভাবস্থায় এবং সন্তানের জন্মের পরে মহিলাদের শরীরে হরমোনের বড় পরিবর্তন ঘটে। এই হরমোনাল পরিবর্তন মস্তিষ্কের রসায়নে প্রভাব ফেলে এবং বিষণ্ণতার সৃষ্টি করতে পারে।
  • শারীরিক চাপ: সন্তান জন্মের পরে শরীরে শারীরিক পরিশ্রমের পরিমাণ বেড়ে যায়, এবং পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মায়ের মানসিক চাপ বাড়ে।
  •  মানসিক চাপ: নতুন দায়িত্ব, সন্তানকে সামলানোর চাপ, এবং মাঝে মাঝে পরিবারের প্রত্যাশার ভার মানসিকভাবে মায়েদের উপর প্রভাব ফেলে।

কিভাবে  এই পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠা যায়? 

১. সাইকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ: পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশনের জন্য কাউন্সেলিং হতে পারে ইফেক্টিভ একটি চিকিৎসা । রীতার ক্ষেত্রে, সে একদিন নিজেকে খুব অসহায় অনুভব করছিল এবং তার পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে একজন সাইকোলজিস্টের কাছে যেতে রাজি হয়েছিল। এর মাধ্যমে সে মানসিক চাপ কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়।

২. পরিবারের সহায়তা: নতুন মায়েদের জন্য পরিবার খুব গুরুত্বপূর্ণ। রীতার শাশুড়ি তাকে অনেক সাহায্য করেছিলেন, কারণ তিনি জানতেন রীতা কষ্ট পাচ্ছে। পরিবারের সদস্যদের ভালোবাসা ও সহযোগিতা মায়েদের শক্তি জোগায়।

৩. বিশ্রাম এবং নিজের প্রতি যত্ন: রীতা নিজের জন্যও কিছু সময় রাখে। কখনো বই পড়ে, কখনো মিউজিক শুনে।

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন কাটিয়ে ওঠা সম্ভব

রীতা এখন অনেক ভালো আছে। সে বুঝেছে, এই সময়ে কষ্ট পেলেও সেটি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। তিনি নিজেকে সময় দিয়েছেন, পরিবারের সাহায্য নিয়েছেন এবং একজন সাইকোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করেছেন। নতুন মায়েদের জন্য এই বার্তাটি গুরুত্বপূর্ণ।

রিল্যাক্সি আপনার পাশে সবসময়

পোস্টপার্টাম ডিপ্রেশন হলেই ভেঙে পড়ার কিছু নেই। সঠিক সময়ে সঠিক সাহায্য পেলে, যে কোনো নতুন মা তার সন্তানকে নিয়ে আনন্দের সাথে জীবন যাপন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে রিলাক্সিতে ঘরে বসে সহজেই সাইকোলজিস্টের সাথে কনসাল্ট করে যে কেউ কাউন্সেলিং সেবা নিতে পারেন। 

👉 রিল্যাক্সি অ্যাপ ডাউনলোড করুন

👉কাউন্সেলিং সেশন বুক করুন  💚

Comments

Write a comment